সাবিত আল হাসানঃ
আলতাফ হোসেন সম্প্রতি বিয়ের পর নব বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন বন্দরের সাবদী এলাকায়। তবে তার ভ্রমণ ততটা সুখকর হয়নি শেষ পর্যন্ত। কিশোর গ্যাং এর উৎপাতের কারনে নিরাপত্তার চিন্তা করে এক প্রকার পালিয়েই ফিরতে হয়েছে সাবদী থেকে। অথচ সাবদীর সৌন্দর্য্যের কারনে এই এলাকাতে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণে। আর এই দর্শনার্থীদের কারনে এখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্যা দোকানপাট।
গত কয়েক বছর ধরে প্রতিদিন সাবদী ফুলের বাগান ও নদীর নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে ছুটে আসে হাজারো মানুষ। করোনাকালে এখানে পদযাত্রা কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানে সৌন্দর্য্য পিপাসুরা নিয়মিতই ছুটে আসছেন প্রতিদিন বিকেলে। তবে বন্ধের দিনগুলোতে এর সংখ্যা হাজার তিনেক ছাড়িয়ে যায়। আর এই দর্শনার্থীদের পুঁজি করেই এখানকার পরিবহণ, দোকান, ফুল ও নানা খাদ্য পন্যের ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয়রা।
তবে আগত দর্শনার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ করারও দৃষ্টান্ত রয়েছে স্থানীয়দের। সেসব ছাপিয়ে নতুন করে যুক্ত হয়েছে কিশোর গ্যাং এর উৎপাত। মূলত ভ্রমনের আড়ালে আড্ডাবাজি আর বখাটেপনা দেখাতেই ছুটে আসে কিশোর দল। মেয়েদের দেখলেই অশ্লীল ইঙ্গিত আর বাক্য ছুড়ে দিয়ে নিজেদের পরিচয় জানান দেয়। কখনও মেয়েদের ছবি তোলা, মোটরসাইকেল নিয়ে ভয় দেখানো সহ নানা কার্যক্রমে বিরক্ত করে আগত দর্শনার্থীদের। আশেপাশে পুলিশ ফাঁড়ী না থাকায় পুলিশ ডেকে আনতে আনতেই পালিয়ে যায় কিশোর গ্যাং এর দল।
সাবদী এলাকায় বেড়াতে যাওয়া আলতাফ হোসেন জানান, স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যাবার পর বেশ বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরলাম। নৌকা ভাড়া করে উঠতেই একদল বখাটে আমার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে অশ্লীল আচরণ আর ইঙ্গিত পূর্ন বাক্য ছুড়ে দিচ্ছিলো। বার বার আমাদের নৌকার কাছে এসে তাদের উৎপাত দেখিয়ে যাচ্ছিলো কেবল। বাধ্য হয়ে দ্রুতই নৌকা পাড়ে ভিড়তে অনুরোধ করি মাঝিকে।
একই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তুষার রায়হান জানান, পরিবারকে নিয়ে সাবদীতে গিয়েছিলাম করোনার পূর্বে। তখন পেয়েছি মোটরবাইক গ্যাঙ্গের উৎপাত। রিক্সা বা অটোয় বসে থাকা নারী যাত্রীদের দিয়ে তাকিয়ে বাজে মন্তব্য করা কিংবা পথচারীদের ভয় দেখানো তাদের নিত্ত নৈমিত্তিক ব্যাপার। এরা দলবল নিয়ে পুরো সাবদীতে উৎপাত করে। এখানে আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় পুলিশ ফাঁড়ি রাখা প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে যে পরিমান সৌন্দর্য্যপূর্ন স্থান রয়েছে তাতে অনায়াসেই পর্যটন শিল্পে সমৃদ্ধ করা সম্ভব। কিন্তু কিশোর গ্যাং ও কিছু স্থানীয়দের হিংস্র মনোভাব ক্রমশই এক শিল্পকে বাঁধা গ্রস্থ করছে। বিশেষ করে পর্যটন এলাকা ঘিরে গড়ে ওঠা দোকান, খাবার হোটেল, রিসোর্ট থেকে চাঁদাবাজি। পরিবহণ ভাড়ার ক্ষেত্রে চালকদের সিন্ডিকেট। ঘুরতে আসা পর্যটকদের স্থানীয় কিশোর গ্যাং দ্বারা হয়রানি ও ছিনতাই ইত্যাদি পর্যটকদের বাজে অভিজ্ঞতা দিচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে এসকল বিষয় থেকে উত্তরণে এখন থেকেই প্রশাসনের নজরদারি করা প্রয়োজন।